আহ্বান গল্প
আহ্বান
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
লেখক পরিচিতি:
বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য প্রতিভাধর লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কলম থেকে ফুটেছে সব বিখ্যাত লেখনী। তার বাল্য ও কৈশোরকাল কাটে অত্যন্ত
দারিদ্রে। তবে তিনি ছিলেন খুবই মেধাবী ছাত্র। ১৯১৪ সালে ম্যাট্রিক ও ১৯১৬ সালে আইএ উভয় পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে এবং ১৯১৮ সালে ডিস্টিংশন সহ বিএ
পাস করেন।
তিনি দীর্ঘদিন স্কুলে শিক্ষকতা করেন এবং শহর থেকে দূরে অবস্থান করে নিরবিচ্ছিন্ন সাহিত্য সাধনা করেন। বাংলার সবুজ শ্যামল প্রকৃতি ও মানুষের জীবনকে তিনি তাঁর অসাধারণ শিল্পসুষমাময় ভাষায় সাহসিক সারল্যে প্রকাশ করেছেন। মানুষকে তিনি দেখেছেন গভীর মমত্ববোধ ও নিবিড় ভালাবাসা দিয়ে। তাঁর গদ্য কাব্যময় ও চিত্রাত্মক বর্ণনায় সমৃদ্ধ।
লেখক সম্পর্কিত তথ্য:
নাম : বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়,
জন্ম : ১২ সেপ্টেম্বর ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে। মুরারিপুর গ্রাম (মামার বাড়িতে), চব্বিশ পরগনা।
মৃত্যু: ১লা সেপ্টেম্বর ১৯৫০ সালে।
পৈত্রিক নিবাস : ব্যারাকপুর গ্রাম, চব্বিশ পরগনা।
পিতার নাম : মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়।
মাতার নাম : মৃণালিনী।
পেশা : শিক্ষকতা।
শিক্ষাজীবন : মাধ্যমিক— ম্যাট্রিক (১৯১৪) বনগ্রাম স্কুল। উচ্চ মাধ্যমিক- আইএ (১৯১৬) কলকাতা রিপন কলেজ। উচ্চতর- বিএ ডিস্টিংশনসহ (১৯১৮) কলকাতা রিপন কলেজ।
সাহিত্যিক পরিচয় :
তিনি মূলত একজন ঔপন্যাসিক, শরৎচন্দ্র পরবর্তী ঔপন্যাসিকদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় ছিলেন । তাঁর সাহিত্য রচনার মূল বিষয় ‘প্রকৃতি ও মানব
জীবন’ । তাঁর সাহিত্যিক ভাষা-মধুর ও কাব্যধর্মী।
বিভূতিভূষণের সাহিত্যকর্ম :
» উপন্যাস: পথের পাঁচালী (১৯২৯), অপরাজিতা(১৯৩১), দৃষ্টি প্রদীপ (১৯৩৫), আরণ্যক (১৯৩৮), আদর্শ হিন্দু হোটেল (১৯৪০), দেবযান (১৯৪৪), ইছামতী
(১৯৪৯),অশনি সংকেত (১৯৫৯) ইত্যাদি।
→ ছোটগল্পঃ মেঘমল্লার, মৌরিফুল, যাত্রাবদল, কিন্নর দল ইত্যাদি ।
→ আত্মজীবনীমূলক রচনা : তৃণাঙ্কুর।
আহ্বান গল্পের পাঠ পরিচিতি:
‘আহ্বান‘ গল্পটি ‘বিভূতিভূষণের রচনাবলি’ থেকে সংগৃহীত হয়েছে। এটি একটি উদার মানবিক সম্পর্কের গল্প। মানুষের স্নেহ-মমতা-প্রীতির যে বাঁধন তা ধন সম্পদের নয়, হৃদয়ের নিবিড় আন্তরিকতার স্পর্শেই গড়ে ওঠে। নিবিড় স্নেহ আর উদার হৃদয়ের আন্তরিকতা ও মানবীয় দৃষ্টির ফলে ধনী দরিদ্রের শ্রেণিবিভাগ ও বৈষম্য, বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে দূরত্ব ও গোঁড়ামির ফলে গড়ে ওঠে তাও ঘুচে যেতে পারে।
এই গল্পে লেখক দুটি ভিন্ন ধর্ম, বর্ণ ও আর্থিক অবস্থানে বেড়ে ওঠা চরিত্রের মধ্যে সংকীর্ণতা ও সংস্কার মুক্ত মনোভঙ্গির প্রকাশ ঘটিয়েছেন। গ্রামীণ লোকায়ত প্রান্তিক জীবন ধারা শাস্ত্রীয় কঠোরতা থেকে যে অনেকটা মুক্ত যে সত্যও এ গল্পে উন্মোচিত হয়েছে।
এ গল্পের মূল বিষয় মানব ধর্মের স্বরূপ বিশ্লেষণ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা।
আহ্বান গল্পের তথ্যকণিকা :
০১. প্রথম লাইন- দেশের ঘরবাড়ি নেই অনেকদিন থেকেই।
০২. আহ্বান গল্পের মূল বিষয় – ধর্মের স্বরূপ বিশ্লেষণ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা।
০৩. লেখককে দেখে কে বেশি খুশি হয়েছেন? – গ্রামের চক্কোত্তী মশাই।
ওর স্নেহাতুর আত্মা বহুদূর থেকে আমায় আহ্বান করে এনেছে।
০৪. ‘আজ্ঞে সামান্য মাইনে পাই’ কথাটি কে বলেছেন ? – লেখক।
০৫. গল্পে জমির করাতি কে? – বুড়ির স্বামী।
০৭. গরমের ছুটি হয়েছিল কোন মাসে? – জ্যৈষ্ঠ মাসে।
০৮. অসুস্থ বুড়ির পাশে কে বসেছিল? – বুড়ির পাতানো মেয়েটি।
০৯. লেখকের মোট কতবার গ্রামের বাড়ির আসার কথা উল্লেখ আছে? – চারবার।
১০. বুড়ি কোন ঋতুতে মারা যায়? – শরৎকালে।
১১. গনির পিতার নাম কী?- আবেদালি।
১২. বুড়ির দুচোখ বেয়ে জল পড়ে কেন? – লেখকের দেখা পেয়ে।
১৩. গল্পে কোন কোন মাসের নাম আছে? – জ্যৈষ্ঠ ও আশ্বিন।
১৪. লেখকের পিতার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন – চক্কোত্তি মশায়।
১৫. কাঁঠালতলায় বসে আপনমনে বকে গেল – বুড়ি।
১৬. বুড়ির সম্বোধন কেমন? — ঘনিষ্ঠ আদরের।
১৭. আমবাগানের মধ্য দিয়ে বাজারে যাচ্ছিল – বৃদ্ধা।
১৮. কলকাতায় কেন বুড়ির কথা মনে আসেনি? – কর্মব্যস্ততার কারণে।
১৯. গোয়ালিনীর নাম কী? – ঘুঁটি গোয়ালিনী।
২০. বুড়িকে মা বলে ডাকে কে? – হাজরা ব্যাটার বউ।
২১. দিগম্বরীর স্বামীর নাম কি? – পরশু সর্দার।
২২. বুড়ির মৃত্যু সংবাদ লেখককে জানায় কে? — দিগম্বরী।
২৩. গাছের ছায়ায় বসেছিল — আবদুল, শুকুর মিয়া, নসর, আবেদালি, গণি।
২৪. গোপালের কাছ থেকে কাফনের টাকা নিয়ে যায় – বুড়ির নাতজামাই।
২৫. তোমায় যে বড্ড ভালবাসত বুড়ি-কার উক্তি? – প্রবীণ শুকুর মিয়ার।
২৬. লেখকের জন্য আম আনার মধ্যে ফুটে উঠেছে — অপত্য স্নেহ।
২৭. বুড়িকে কবরস্থ করা হয় কোথায়? – প্রাচীন তিত্তিরাজ গাছের তলায়।
২৮. লেখক পথ্য ও ফলের জন্য টাকা দিয়েছিল কাকে — বুড়ির পাতানো মেয়েকে।
২৯. শেষ লাইন— সঙ্গে সঙ্গে মনে হলো,ও বেঁচে থাকলে বলে উঠতো অ মোর গোপাল।
৩০. বুড়ি সর্বপ্রথম লেখকের জন্য কী এনেছিল? — আম।
আহ্বান গল্পের চরিত্র সমূহ:
» গোপাল – লেখক, গল্প কথক।
» চক্কোত্তি মশাই – লেখকের বাবার পুরাতন বন্ধু।
» জ্ঞাতি খুড়ো – লেখকের আত্মীয়, তাঁর বাসায় লেখক থাকতেন।
» হাজরা ব্যাটার বউ – বুড়ির পাতানো মেয়ে।
» গনি – আবেদালির ছেলে।
» আবদুল, নসর – বুড়িকে কবর দিতে এসেছিল।
» পরশু সর্দার – দিগম্বরীর স্বামী।
» বুড়ি – জমিরের স্ত্রী, গল্পের মূল চরিত্র।
» নাত জামাই – বুড়ির একমাত্র রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়।
» আবেদালি – লেখকের সহপাঠি।
» শুকুর মিয়া – লেখককে বুড়ির কবরে মাটি দিতে বলেছিল।
» দু জোয়ান – বুড়ির কবর খননকারী।
» দিগম্বরী – লেখককে বৃদ্ধার মৃত্যুর খবর দেয়।
» জমির – বুড়ির স্বামী (পেশায় করাতি)।
শব্দার্থ:
» চক্কোত্তী – চক্রবর্তী উপাধির সংক্ষিপ্ত রূপ।
» অন্ধের নড়ি/অন্ধের যষ্টি – অসহায়ের একমাত্র অবলম্বন।
» নড়ি – লাঠি।
» গোলাপোরা – গোলাভরা।
» দাওয়া – রোয়াক, বারান্দা।
আরও পড়ুনঃ আমার পথ প্রবন্ধ।