দ্বিজাতি তত্ত্ব কি

প্রশ্নঃ দ্বিজাতি তত্ত্ব কি?
উত্তরঃ ব্রিটিশ ভারতকে দুই ভাগে বিভক্ত করার জন্য যে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছিলো সেটি দ্বিজাতি তত্ত্ব নামে পরিচিত। এই প্রস্তাবের ভিত্তি ভারতীয় উপমহাদেশ বিভক্ত হয়ে ভারত এবং পাকিস্তান নামে দুটি পৃথক রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে।
দ্বিজাতি তত্ত্ব কি ? বিস্তারিত…
ব্যাখ্যাঃ ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন জাতি ও রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে ভারতকে রাজনৈতিকভাবে দ্বিধাবিভক্ত করার নির্ণায়ক ও আদর্শাশ্রয়ী একটি রাজনৈতিক মতবাদ। ভারত থেকে ব্রিটিশ শাসন অবসানের প্রাক্কালে বিশ শতকের চল্লিশের দশকে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ দ্বিজাতি তত্ত্বের এ ধারণার উন্মেষ ঘটান।
হিন্দু ও মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থার মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণের পরেই মুসলিম নেতৃবৃন্দের ভাবোদয় হয় যে, পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থার সুফল দ্বারা দুটি পৃথক জাতীয়তাবাদী চিন্তার উদ্রেক সম্ভব যাকে দ্বিজাতিতত্ত্ব অভিধায় আখ্যায়িত করা যায় কারণ, ভারতের মুসলিম জনগোষ্ঠী ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সামাজিকভাবেই পৃথক একটি জাতি গঠন করতে সক্ষম। মুসলমানদের একটি জাতি হিসেবে আত্মপরিচয়ের সন্ধানে উদ্বুদ্ধ করতে স্যার সৈয়দ আহমদ খান (১৮১৭-১৯০৮) এ ধারণার উন্মেষ ঘটান। জিন্নাহ ঘোষণা করেন যে, হিন্দু মুসলমান দুটি আলাদা জাতি হবে। তার এ ঘোষণা ‘দ্বিজাতি তত্ত্ব’ হিসেবে পরিচিত।
প্রশ্নঃ প্রশ্নঃ দ্বিজাতি তত্ত্বের প্রবক্তা কে ও কত সালে ঘোষণা দেন।
উত্তরঃ মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৩৯ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ঘোষণা দেন।
আরও পড়ুনঃ কষ্টের স্ট্যাটাস
দ্বিজাতি তত্ত্বের যৌক্তিকতা
ব্রিটিশ ভারতের মুসলমানরা শিক্ষা, রাজনৈতিক অধিকার এবং বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তারা বাংলাকে দুই ভাগে বিভক্ত করার জন্য আন্দোলন করেন। উল্লেখ্য, তৎকালীন বাংলার উত্তরাংশে হিন্দু এবং দক্ষিণাংশে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল।
বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের ফলে ১৯০৫ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের বড়লাট লর্ড কার্জনের আদেশে বঙ্গভঙ্গ হয়। অর্থাৎ বাংলাকে দুইভাগে বিভক্ত করা হয়। বঙ্গ ও আসামকে (বর্তমান বাংলাদেশ এবং ভারতের আসাম) আলাদা করা হয় এবং একটি আলাদা প্রশাসন গঠন করা হয়। কংগ্রেস শুধুমাত্র হিন্দুদের স্বার্থ নিয়ে কাজ করায় এটি একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীতে পরিণত হয়। তখন মুসলিম রাজনীতিবিদরা মুসলিম স্বার্থ রক্ষার জন্য ১৯০৬ সালে নবাব স্যার সলিমুল্লাহ -এর নেতৃত্বে নিখিল ভারত মুসলিম লীগ গঠন করা হয়।
বঙ্গভঙ্গের ফলে মুসলিমদের ইংরেজি শিক্ষার সুযোগ বেড়ে যায়। তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আবস্থার উন্নতি হতে থাকে। অন্যদিকে কংগ্রেস কট্টর হিন্দুত্ববাদি দলে রূপ নেয় এবং বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন শুরু করে। তাদের কঠোর আন্দোলনের ফলে ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ হ্রদ করা হয়। পূণরায় বাংলাকে একত্রিত করা হলেও উগ্র-হিন্দুত্ববাদিদের মুসলিম বিদ্বেষের ফলে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংঙ্গালিরা পিছিয়ে পড়তে থাকে। তারা সবসময় মুসলিম স্বাথবিরোধী কাজে লিপ্ত ছিল। এ থেকে বোঝা যায় যে হিন্দু এবং মুসলমানদের জন্য দুটি পৃথক রাষ্ট্রে অত্যাবশ্যক ছিল। এর ফলে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে ১৯৪৭ সালে আরেকটি দেশ গঠন করা হয় এবং এর নাম দেওয়া হয় পাকিস্তান। সুতরাং দ্বিজাতি তত্ত্বটি অত্যন্ত যৌক্তিক একটি দাবি ছিল।
দ্বি জাতি তত্ত্বের তাৎপর্য
ভারতীয়দের প্রথম সুসংগঠিত রাজনৈতিক সংগঠন হলো ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস (১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত)। প্রতিষ্ঠার প্রারম্ভে দলটি সকল ধর্মের মানুষের স্বার্থ সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দান করে। কিন্তু পরবর্তীতে উক্ত সংগঠনে মুসলমানদের স্বার্থ উপেক্ষিত হতে থাকে। এ অবস্থায় মুসলমানরা ১৯০৬ সালে পৃথক রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে মুসলিম লীগ গঠন করে। এখানে দেখা যায়, কংগ্রেস ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে ধর্মীয় স্বার্থকে স্থান দিয়েছিল।
মোহাম্মদ আল জিন্নাহ নিখিল ভারত মুসলিম লীগের অধিবেশনে প্রথম দ্বিজাতি তত্ত্বের ধারণা উপস্থাপন করেন। হিন্দু ও মুসলমান আলাদা জাতি এবং তাদের কৃষ্টি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য আলাদা হওয়ায় মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমির প্রয়োজন বলে তিনি ধারণা করেন। মূলত তার দ্বি জাতি তত্ত্বের ১৯৪৭ সালে ভারত বিভোক্তি হয়েছিল। ১৯৪৭ সালের ১৪ ই আগস্ট পাকিস্তান এবং ১৫ই আগস্ট ভারত স্বাধীনতা লাভ করে।
দ্বিজাতি তত্ত্ব কি ? সংক্ষেপে…
তৎকালীন ভারতের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে মুসলিম রাজনীতিবিদরা বুঝতে পারলো যে মুসলমানদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য আলাদা রাষ্ট্রের বিকল্প নেই। তাই মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৩৯ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ঘোষণা দেন। তার এই দাবিতে অন্যান্য মুসলিম নেতারাও সহমত পোষণ করেন। দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে ভারত এবং পাকিস্তান নামের দুটি রাষ্ট গঠিত হয়।
আশা করি বুঝতে পেরেছেন দ্বিজাতি তত্ত্ব কি এবং এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য কতটুকু।
আরটিকেলটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। তাদেরকেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো জানতে সহায়তা করুন। আপনার যদি কিছু বলার থাকে কিংবা কোনভুল তথ্য পেয়ে থাকেন তাহলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং কমেন্ট করে জানান।
আরো পড়ুনঃ পাকিস্তান কবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়